কোরবানির গরু জবাই করার সহজ পদ্ধতি কোরবানির নিয়মঃ
নিজের কোরবানি নিজেই করাই হচ্ছে উত্তম । নিজে না জানলে একজন জাননেওয়ালা ব্যক্তির মাধ্যমে জবেহ করানো জায়েয আছে । জবেহ করার সময় কোরবানিদাতা নিকটে থাকা উত্তম । কোরবানির নিয়ত মনে মনে করলে হবে । জবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’বলা জরুরী’।
চামড়া ছড়ানোর পদ্ধতিঃ
কোরবানির নিয়ম অনুসারে যিনি কোরবানি দিবেন তিনি ইচ্ছে করলে পশুর চামড়া নিজের ব্যাবহারের জন্য রেখে দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে কোরবানির চামড়া নিজের ব্যাবহারের প্রচলন খুব বেশি না বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা চামড়া বিক্রী করে দেই। যেহেতু চামড়া বিক্রী করে দেই এবং এর বিক্রীত অর্থ গরীবদের হক হয়ে যায় সেকারনে, অনেক সময় না জানার কারনে চামড়ার প্রতি আমরা যত্নবান হই না। যত্নবান না হওয়ার কারনে দুটো ঘটনা ঘটেঃ
বেশিরভাগক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের অসচেতনার কারনে আমরা ভালো চামড়া থেকে বঞ্চিত হই। একটা পশু যখন জীবিত অবস্থায় থাকে তখন এর মধ্যে অনেক এন্টিবডি কাজ করে। কিন্তু জবেহের পরে এর মধ্যে ক্রিয়াশীল এন্টিবডির অক্ষমতার কারনে ভাইরাস/ব্যাক্টেরিয়ার দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং পচনের দিকে ধাবিত হয়। পশুর গায়ের থেকে চামড়া ছাড়ানো হতে ট্যানারীতে প্রক্রিয়াজাত পদ্ধতিতে যাওয়ার আগ পর্যন্তই খুব গুরুত্বপুর্ণ সময়। এসময়েই চামপড়া বেশি নষ্ট হয়। আর এই নষ্ট হওয়াটা পরবর্তিতে কেমিক্যাল বা মেকানিক্যাল অপারেশনে খুব কমই দূর করা যায়। সেক্ষেত্রে চামড়া ছড়ানোর প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের সচেতন হতে হবে।
আপনার পশুর কোরবানি এবং তারপরবর্তিতে পশুর চামড়া ছাড়ানোর সময় নিম্নোক্ত বিষোয়গুলো লক্ষ রাখুনঃ
- জবাই করার আগে পশুকে প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়ান।
- পশুকে শুইয়ে এমনভাবে টানা হেচড়া করবেন না যাতে পশু কষ্ট পায় এবং চামড়া ছিলে যায়। এটা ধর্মীওভাবেও নিষেধ করা হয়েছে।
- সবচেয়ে ভালো হয় এবং যদি সম্ভব হয় গরু বা ছাগল-যে পশুর চামড়াই ছাড়াতে চান না কেন, অবশ্যই নাইলনের মোটা দড়ি দিয়ে শক্ত কোনো খুঁটির সঙ্গে পশুটি ঝুলিয়ে দিলে। এতে চামড়া টানাহেচড়া জনিত কারনে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
- চামড়া ছাড়ানোর ক্ষেত্রে ধারালো ছুরি ব্যাবহার করুন। ভোঁতা ছুরি দিয়ে ছাড়ানোর সময় চামড়া ছিঁড়ে যেতে পারে।
- ছাগলের চামড়ার ক্ষেত্রে অনেকেই ছুরি দিয়ে কেটে নেওয়ার পর টান দিয়ে নিচের দিকে নামাতে থাকে। এতে একটু ভুলেই চামড়া ছিঁড়ে যেতে পারে চামড়া।
- চামড়া ছাড়ানোর পর অনেকেই তা যেনতেনভাবে মাটিতে ফেলে রাখে। একটু সময় করে ভাঁজ করে রাখুন।
- চামড়ার গায়ে যাতে মাংশ বা চর্বি লেগে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন। আমাদের দেশে কোরবানির সময় দক্ষ কসাইয়ের অভাব থাকে বিধায় এ সমস্যা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে মাংশের পচনের মাধ্যমে চামড়ার পচন তরান্বিত হয়।
- ছাগল বা গরুর মাথার চামড়াও মূল্যবান। এটি আলাদা করার সময় অবহেলা করা উচিত নয়।
সবচেয়ে ভালো হয় চামড়া ছাড়ানোর পর দুই থেকে তিন ঘণ্টার (গরমকালে) এবং চার থেকে ছয় ঘণ্টার (শীতকালে) মধ্যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিলে। সেক্ষেত্রে আপনারা যত দ্রুত সম্ভব চামড়া বিক্রী করে দিতে পারেন। নতুবা কাঁচা চামড়ায় পচন ধরে যাবে। আপনি চামড়া বিক্রী করতে না পারেন তাহলে আপনাকে চামড়া সংরক্ষন করতে হবে। চামড়া সংরক্ষণের নানা রকম পদ্ধতির মধ্যে আছে লবণ দিয়ে, রোদে শুকানো এবং হিমাগারে সংরক্ষণ। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি লবণ দিয়ে রোদে শুকানো। এ পদ্ধতিতে চামড়া বিছিয়ে তার উপর লবন ছিটিয়ে দিতে হয়। এতে করে চামড়ার মধ্যকার পানি বেরিয়ে আসে এবং ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া মরে যায়। তারপর চামড়াকে ফোল্ড করে ভাজ করে রাখা যায়। কিছু কিছু ব্যাক্টেরিয়া তারপরেও থেকে যায়। সেক্ষেত্রে লবনের সাথে সামান্য পরিমান ন্যাফথালিন এবং সোডা এশ মিশিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।